আজঃ শুক্র, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

শীতের আমেজে মজার মজার পিঠা!!!

লিখেছেনঃ সুমাইয়া পঠিত 442 বার
শীতের আমেজে মজার মজার পিঠা!!!
শীতের আমেজে মজার মজার পিঠা!!!


আসছে শীতকাল চারদিকে শীত শীত আমেজ।শীতকাল মানেই বাঙালীর কাছে পিঠা পুলির উৎসব। বাঙালীর প্রতিটি ঘরে ঘরে পিঠা বানানোর ধুম লেগে যায়।

শীতকালীন মজার মজার পিঠাগুলোর মাঝে অন্যতম হচ্ছে ক্ষীর পাটিশাপটা,রসমাধুরী,দুধপুলি,দুধ গোকুল পিঠা।

ক্ষীর পাটিশাপটাঃ

ক্ষীর পাটিশাপটা পিঠা খেতে যেমন মজাদার দেখতেও অনেক লোভনীয়।দুধের ক্ষীর এবং খেঁজুরের গুড় দিয়ে এই পিঠা তৈরি করা হয় বলে লজেতে অনেক মজাদার।

আসুন আমরা জেনে নেই কিভাবে খুব সহজেই ক্ষীর পাটিশাপটা করবেন,

উপাদানঃ

১. দুধ – ২লিটার

২. চিনি- ১/২ (হাফ) কাপ

৩. সুজি- ১/২ (হাফ) কাপ

৪. ময়দা- ১/২ (হাফ) কাপ

৫. চালের গুড়া- ১/৪ কাপ (এক কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ)

৬. খেঁজুরের গুড়- ২০০ গ্রাম

৭. ঘি এবং সয়াবিন তেল

প্রস্তুত প্রনালীঃ

প্রথমে পিঠার পুর তৈরি করতে হবে।পুর তৈরি করার জন্য প্রথমে একটি পাত্রে ২ লিটার দুধ নিয়ে জ্বাল করতে হবে।প্রথমে হাই হিট এ রেখে জ্বাল করতে হবে।দুধটা ফুটে উঠলে মিডিয়াম লো হিটে রেখে জ্বাল দিতে হবে।দুধটা জ্বাল করার সময় অনবরত নাড়তে থাকতে হবে যাতে দুধটা না লেগে যায়।কিছুক্ষন পর পর পাত্রের সাইডে সর গুলো জেন না লেগে যায় খেয়াল রাখতে হবে।প্রায় আধ ঘন্টা পর দুধটা ঘন হয়ে আসবে।ততক্ষন পর্যন্ত দুধ টা নাড়তে থাকতে হবে।যখন দুধের কালার টা ঘন হয়ে পরিবর্তন হয়ে যাবে অর্থাৎ ক্রিম কালার এর মত হয়ে যাবে তখন ১/২ কাপ চিনি মিশাতে হবে।আপনারা যারা মিষ্টি কম খান চাইলে চিনিটা বাদ দিতে পারেন।চিনি মেশানোর পর আরো আধা ঘন্টা মাঝারি আঁচে নেড়ে নেড়ে দুধ টা ঘন করতে হবে।ঘন হয়ে গেলে এবার ক্ষীরটাকে ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিতে হবে।

ক্ষির পাটিশাপটা পিঠার বেটার বা ঘোলা তৈরি করার জন্য একটি পাত্রে ১/২ কাপ পরিমাণ সুজি নিতে হবে,এরপর ১/২ কাপ পরিমান ময়দা,চালের গুড়া দিতে হবে ১/৪ ভাগ এরপর খেঁজুরের গুড় ২০০ গ্রাম।সব গুলো একসাথে নেড়ে মিশাতে হবে।পিঠার বেটার টা পাতলা করতে অল্প অল্প করে দুধ মেশাতে হবে।পানি দিয়েও করা যাবে কিন্তু এতে স্বাদের পরিমান টা কমে যাবে।পিঠার বেটার টা পাতলা করে তৈরি করতে হবে আবার বেশী পাতলা করা যাবে না।পরিমান মতো করে যাতে পুর দেওয়া যায়।

এবার বেটার টাকে ১৫ মিনিট এর জন্য রেখে দিতে হবে।সেই সুযোগে ঠান্ডা হওয়া ক্ষির টাকে হাতে অল্প অল্প ঘি মেখে হাতের তালুতে রেখে লম্বা রোল করে নিতে হবে।

এবার একটি তাওয়া বসিয়ে গরম করে নিতে হবে।তাওয়াতে হালকা তেল অথবা ঘি দিয়ে ব্রাশ করে নিবেন।তারপর একটি চামচ দিয়ে তাওয়ার মাঝখানে পিঠার বেটার ঢেলে দিতে হবে।এরপর তাওয়া টাকে ধরে একটু ঘুরিয়ে পিঠা কে একটু গোল করে ছড়িয়ে দিতে হবে। ৩০ সেকেন্ড এর জন্য ঢেকে রেখে দিতে হবে। ৩০ সেকেন্ড হয়ে গেলে চুলার আঁচটা একদম কমিয়ে ক্ষীরের পুর টাকে পিঠার এক সাইডে দিয়ে রোল করে নিতে হবে।এভাবে সবগুলো পিঠা তৈরি করতে হবে।

রসমাধুরী পিঠাঃ

এই পিঠাটি অনেক নরম ও তুলতুলে।তার জন্য বাচ্চাদের কাছে খুব পছন্দের।

উপকরণঃ

১. সিদ্ব চালের গুড়া – ১ কাপ (ভাতের চাল)

২. ১/২ (আধা) কাপ ময়দা

৩. ২ চা চামচ বেকিং পাউডার

৪. ৩ টেবিল চামচ চিনি

৫. ১ টেবিল চামচ গুড়ো দুধ

৬. ১ চিমটি এলাচ গুড়ো এবং এক চিমটি লবণ।

৭. ঘি

৮. নর্মাল তরল দুধ ১/২ (আধা) কাপ

৯. একটি ডিম

প্রস্তুত প্রনালীঃ

প্রথমে সিদ্ব ভাতের চাল পানি থেকে ঝড়িয়ে গুড়া করে নিতে হবে।ব্লেন্ডারে গুড়া করে নিলে ভালো হয় আর ব্লেন্ডার না থাকলে শিল পাটাতে বেটেও গুড়া করা যায়।

একটি পাত্রে চালের গুড়া,ময়দা,বেকিং পাউডার,চিনি,গুড়া দুধ,এ;লাচ এবং লবণ সব গুলো উপকরণ একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে এরপর ৩০ মিনিট এর জন্য চেকে রেখে দিন।মিশ্রনটি বেশী পাতলা মনে হলে আরো ২ টেবিল চামচ চালের গুড়ো দিয়ে মিশিয়ে নিন।এরপর ছোট স্টিলের বাটি অথবা চায়ের কাপে হালকা তেল ব্রাশ করে মিশ্রনটি ঢেলে দিন।সাজানোর জন্য উপর দিয়ে হালকা বাদাম অথবা কিসমিস দিয়ে দিন।এরপর একটা তাওয়াতে বাটি গুলো বসিয়ে দিন ১০-১৫ মিনিট পর নামিয়ে নিন। এবার আপনার পিঠা তৈরি।

দুধপুলি পিঠাঃ

উপকরনঃ

১. দুধ ১ লিটার

২. ১ কাপ পরিমান কোড়ানো নারকেল হাফ কাপ পরিমান খেজুর গুড়

২ টা এলাচি,২টা দারুচিনি

৩. ২ টেবিল চামচ গুরো দুধ

৪. ১কাপ পানি,১ চিমটি লবণ

৫. চালের গুড়ো ১ কাপ

প্রস্তুত প্রনালীঃ

ধাপঃ১

প্রথমে ১ লিটার দুধকে জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিতে হবে।এমনভাবে করতে হবে যেন ৪ ভাগের ৩ ভাগ কমে যায়।জ্বাল করার সময় মাঝে মাঝে নেড়ে দিতে হবে যাতে মোটা সর না পরে এবং লেগে না যায়।দুধটা গ্বাল হয়ে গেলে এক পাশে রেখে দিতে হবে।

ধাপঃ২

পুর তৈরি করার জন্য একটা কড়াইতে খেজুর গুড়,নারকেল,এলাচ এবং দারুচিনি দিয়ে জ্বাল দিতে হবে।চুলার আঁচটা মিডিয়াম রেখে পুরটা তৈরি করতে হবে। আঠালো হয়ে গেলে ২ চামচ গুড়ো দুধ দিয়ে নেড়ে তুলে ফেলতে হবে।

ধাপঃ৩

পিঠার কাই তৈরি করার জন্য একটা পাতিলে ১ কাপ পানি নিতে হবে এরপর লবণ দিতে হবে পানি ভালোভাবে ফুটলে চালের গুড়ো দিয়ে ১০ মিনিট ঢেকে রাখতে হবে।এরপর ভালোভাবে নেড়ে তুলে ফেলতে হবে।গরম গরম থাকতে কাই টাকে ভালো করে মথে গোল করে নিতে হবে।একটা মিডিয়াম পাতলা টাইপ রুটি তৈরি করে নিয়ে যে কোন ধরনের সাঁজ করে নিতে পারেন ভিতরে পুর দিয়ে ইচ্ছে মতো পিঠা তৈরি করে দুধে ডুবিয়ে ৫-৬ মিনিট জ্বাল করুন।এবার আপনার দুধপুলি তৈরি।

দুধ গোকুল পিঠাঃ

উপকরনঃ

১. চালের গুড়া ১ কাপ

২. ১/২ (হাফ) কাপ ময়দা

৩. ময়দা

৪. খেজুর গুড় ১/২(হাফ) কাপ

৫. কোড়ানো নারকেল ১ কাপ

৬. ২ টেবিল চামচ গুড়ো দুধ

৭. তরল দুধ ১ লিটার

৮. তেল(রান্নার)

প্রস্তত প্রণালীঃ

চালের গুড়ো ময়দা একসাথে একটা বাটিতে নিয়ে পানি দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে।অল্প অল্প করে পানি মিশিয়ে একটা ঘন মিশ্রন তৈরি করতে হবে।এবার পরিমান মত লবণ মিশাতে হবে।

পুর তৈরি করার জন্য একটা পাত্রে খেজুর গুড়,নারকেল এবং ২ টেবল চামচ গুড়ো দুধ মিশিয়ে নিতে হবে।তারপর চুলায় বসিয়ে হালকা আঁচে রেখে নাড়তে হবে।নাড়তে নাড়তে আঠালো হয়ে গেলে নামিয়ে ফেলতে হবে।

ঠান্ডা হয়ে গেলে পুর গুলো অল্প অল্প করে নিয়ে হাতের তালুতে নিয়ে গোল করে চ্যাপ্টা করে তৈরি করতে হবে।এরপর আরেকটি পাত্রে তেল গরম করতে হবে।পিঠা গুলোকে ঘন মিশ্রনে চুবিয়ে ডুবো তেলে ভাঁজতে হবে।হালকা লাল হয়ে আসলে পিঠা গুলো নামিয়ে ফেলতে হবে।এইবার সবগুলো ভাঁজা হয়ে গেলে ১ লিটার দুধ কে জ্বাল করে অর্ধেক করে নিতে হবে এবং এর মাঝে সব গুলো পিঠা দিয়ে জ্বাল করতে হবে।পিঠাগুলো দেওয়ার পর ১/২ কাপ গুড় দিতে হবে। ১২-১৫ মিনিট পিঠা গুলোকে সিদ্ব করতে হবে এবং মাঝে মাঝে নেড়ে দিতে হবে।ঘন হয়ে গেলে নামিয়ে নিন।গরম গরম পরিবেশ করুন দুধ গোকুল পিঠা।

শীতকাল মানেই পিঠা উৎসব পরিবারের সাথে এসব উৎসবের মজাই আলাদা সাথে যদি হয় এসব মজার মজার পিঠা তাহলে ত কথাই নেই।