আজঃ শুক্র, ২৯ মার্চ ২০২৪

প্রোটিন পাউডার কী? গর্ভবস্থায় এবং শিশুদের দ্রুত বিকাশের জন্য প্রোটিন পাউডার সেবন কতটা জরুরী

লিখেছেনঃ সুমাইয়া পঠিত 875 বার
প্রোটিন পাউডার কী? গর্ভবস্থায় এবং শিশুদের দ্রুত বিকাশের জন্য প্রোটিন পাউডার সেবন কতটা জরুরী
প্রোটিন পাউডার কী? গর্ভবস্থায় এবং শিশুদের দ্রুত বিকাশের জন্য প্রোটিন পাউডার সেবন কতটা জরুরী


প্রথমে জেনে নেই প্রোটিন পাউডার কি?
প্রোটিন পাউডার হলো প্রোটিন এবং তার সাথে আরো অন্যান্য গুরত্বপূর্ন কিছু প্রোটিন জাতীয় পুষ্টি উপাদানের একটি বেশ ভালো উৎস।একজন মানুষকে সুস্থ ও সবল থাকতে হলে প্রতিদিন কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ব খাবার এর পাশাপাশি প্রোটিন ও খেতে হবে।

একটি গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে ৭০% মানুষ প্রোটিনের অভাবে ভোগেন এবং কোন ক্ষেত্রে সেটা ৮০% পর্যন্ত।

খাদ্যতালিকায় প্রোটিন সাপ্লিমেট যোগ করার অর্থ হল বেশ কিছু উপকারিতা যোগ করা।যেমন ওজন কমানো,মেটাবনিজিমের উন্নতি কিংবা সার্বিকভাবে ভারসাম্য বজায় রেখে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।শরীর সবল রাখতে রোজকার গায়ে পুষ্টি বজায় রাখতে প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে রোজকার খাবারের পরিবর্তে অনেকেই প্রোটিন পাউডার খান।ওজন কমাতে অনেকেই প্রোটিন পাউডারের উপর ভরসা রাখেন।

প্রোটিনের উৎসঃ

শরীরে ফাস্ট ক্লাস প্রোটিন আসে মাংস,মাছ,ডিম ও দুগ্বজাতীয় প্রোডাক্ট থেকে।আর সেকেন্ড ক্লাস প্রোটিন উৎস ডাল,সয়াবিন,রাজমা,ছোলা,ছাতু ইত্যাদি।কিন্তু খাবার থেকে পর্যাপ্ত প্রোটিন শরীরে না পৌঁছালে তখনই কাজে দিবে প্রোটিন পাউডার।

পুষ্টিবিদদের মতে,”সুস্থ থাকতে হলে ফাস্ট ক্লাস ও সেকেন্ড ক্লাস দুটি প্রোটিনই খাওয়া দরকার কিন্তু চাহিদা মতো মাছ,মাংস ডিম না খেলে প্রোটিনের ঘাটতি তৈরি হয়।অন্যদিকে গলও তা থেকে উৎপন্ন প্র্যাক্ট,সয়াবিন,রাজমার মতো খাবার পুরোপুরি বর্জন করলেও প্রোটিনের অভাব ঘটে। খাদ্যতালিকায় প্রোটিনের ঘাটতি প্রোটিন পাউডার দিয়ে পূরন করা সম্ভব।

সুস্থ থাকতে প্রতিদিন কত কিলোঃ প্রোটিন খাওয়া প্রয়োজন?

সাধারন সুস্থ গেলে মানুষের দেহে প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য দশমিক ৮ গ্রাম করে প্রতিদিন প্রোটিন খাও্যার পরামর্শ দেয় স্বাস্থ্য বিজ্ঞান। কিন্তু এই পুষ্টি উপাদান খাবারের ভেতর থেকে খুঁজে বের করা কঠিন।

প্রোটিন পাউডারের মধ্যে সব খাদ্যবস্তুর প্রোটিন থাকার সঙ্গে নিউট্রিয়োটস ও কার্বোহাইড্রেড,ফ্যাট,মিনারেলস ইত্যাদি থাকে।প্রোটিন পাউডারের দারুন এক উৎস হলো বিভিন্ন ধরনের বাদাম।

খুব সহজেই ঘরে বসে বানিয়ে নেওয়া যায় প্রোটিন পাউডার।বাজার থেকে কিনার বাড়তি ঝামেলায় পরতে হয় না।

ঘরের তৈরি প্রোটিন পাউডার এর রেসিপিঃ

১০০ গ্রাম প্রোটিন পাউডার তৈরি করতে লাগবে

  1. চিনা বাদাম – ২৫ গ্রাম
  2. কাঠ বাদাম – ২৫ গ্রাম
  3. কাজু বাদাম / মিষ্টি কুমড়ার বিচি – ২৫ গ্রাম
  4. সয়াবিন বীজ / পেস্তা বাদাম – ২৫ গ্রাম
  5. ওস্ট / গম – ২৫ গ্রাম
  6. দুধের গুড়া – ২৫ গ্রাম
  7. চিয়া সীডস – ১ টেবিল চামচ

প্রস্তুত প্রনালীঃ

চিনা বাদাম,কাঠ বাদাম,কাজু বাদাম/মিষ্টি কুমড়ার বিচি,সয়াবিন বীজ/পেস্তা বাতাম,ওস্ট/গম,চিয়া সীডস সব গুলো উপকরণ আলাদা আলাদা ভাবে তাওয়া বা কড়াইতে দিয়ে ভেজে নিতে হবে (তেল ছাড়া)।ঠান্ডা হয়ে গেলে ব্লেন্ডারের সাহায্যে অথবা ব্লেন্ডার না থাকলে শিল পাটাতে গুড়ো করে নিবেন।ব্লেন্ডারে করলে পাউডার গুলো ভালোভাবে মিশ্রিত হয়। শিল পাটাতে গুড়ো করলে গুড়ো দুধ দিয়ে ভালোভাবে মিশ্রিত করতে হবে এবং ব্লেন্ডারে সব গুলো উপকরণ গুড়ো করে চালনি দিয়ে ঢেলে নিয়ে গুড়ো দুধ মিশিয়ে আবার ব্লেন্ডিং করতে হবে।

এভাবে প্রোটিন পাউডার তৈরি করে ১ সপ্তাহ ধরে ফ্রিজে সংরক্ষন করতে পারবেন।

দুধের সাথে মিশিয়ে অথবা গরম পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন পান করতে পারেন।প্রোটিন পাউডার ১ গ্লাস দুধ/পানিতে ১-২ চামচ মিশিয়ে পান করুন।

শিশুদের শারীরিক দ্রুত বিকাশের জন্য প্রোটিন পাউডার কতটা গুরুত্বপূর্ন?

দুই থেকে ছয় বছর বয়স শিশুর বাড়ন্ত বয়স।এ সময়ে শিশুর দ্রুত শারীরিক বৃদ্বির সঙ্গে মানসিক বৃদ্বিও ঘটে।তার উপর এই বয়সে শিশুদের ছুটোছুটি আর দৌড়ঝাঁপ করে প্রচুর শক্তিও খরচ করে।তাই ঝড়ন্ত বয়সে শিশুর জন্য চাই পুষ্টিগুন ভরপুর একটি খাদ্য তালিকা।এই সময় বাচ্চারা খেতে চায় না তাই তাদের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়।অনেক সময় প্রোটিন এর ঘাটতি দেখা দেয়।বয়সের তুলনায় স্বাস্থ্য কম থাকে বেড়ে উঠার ক্ষমতা কম থাকে।প্রোটিন পাউডারে মেটাবনিজম এবং সকল প্রকার প্রোটিন বিদ্যমান যা শিশুদের মেধা বিকাশ এবং শারীরিক বিকাশে সহায়তা করে।

গর্ভাবস্থায় প্রোটিন পাউডার কতটা প্রয়োজন?

গর্ভদশার সময় বাড়ার সাথে সাথে কোন ও গর্ভবতী মহিলার মধ্যে প্রোটিনের চাহিদাটাও ক্রমশ বেড়ে যায় এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকে যখন গর্ভস্থ শিশুটি দ্রুত হারে বৃদ্বি পেতে থাকে তখন সেই চাহিদাটি শীর্ষে পৌঁছায়।কোনও গর্ভবতী মহিলার প্রতিদিনের প্রস্তাবিত প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা মহিলার শরীরের ওজন এর উপর নির্ভর করে,তবে এটি সাধারন স্বাভাবিক খাদ্য উপাদানের মাধ্যমে পুষ্ট মহিলাদের গর্ভাবস্থাকালীন দেহের ওজন ধরা হয়ে থাকে (যাচাই করে নিতে হবে)।চলতি নিয়ম হলো, দেহের ওজনকে কিলোগ্রামে প্রকাশ করে ১.২ দিয়ে গুন করে যে সংখ্যাটি পাওয়া যাবে সেই সংখ্যক গ্রাম পরিমানই হল প্রয়োজনীয় প্রোটিনের পরিমান।যেমন-গর্ভাবস্থায় প্রথমদিকে যদি আপনার ওজন ৬০ কেজি হয়,তবে আপনার প্রতিদিনের প্রোটিন প্রয়োজন হবে ৭২ গ্রাম।সময়ের সাথে আপনার গর্ভাবস্থায় তৃতীয় মাসে পৌঁছানোর সময় আপনার দেহে প্রোটিনের প্রয়োজনিয়তা বেশী হবে।আপনার দেহের ওজনকে তখন ১.৫ দ্বারা গুন করতে হবে. ১.২ এবং ১.৫ সংখ্যা দুটি হলো গর্ভকালীন সময়ে প্রথম শুরুর দিকের এবং শেষের দিকের প্রতিদিন দেহ ওজনের প্রতি কেজিতে প্রয়জনীয় পরিমানে গ্রামে প্রোটিনের পরিমান।

অনেক সময় গর্ভাবস্থায় খাবারে অরুচি হয়,প্রোটিন জাতীয় খাবার খুব কম খাওয়া হয় বা খেতে চায় না.প্রতিদিন প্রোটিন পাউডার সেবন করে তার ঘাটতি মেটানো সম্ভব।আবার বাজারে কেনা প্রোটিন পাউডার গর্ভবস্থায় সেবন না করাটাই উত্তম।কেননা এইগুলোর মধ্যে প্রায়শই স্যাকারিনের মতো কৃত্রিম শর্করা থাকে যা গর্ভের সন্তানের জন্য ক্ষতি হতে পারে। তাই ঘরের তৈরি প্রোটিন পাউডার সেবন করুন।

আমরা অনেক সময় যারা ডায়েট করি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বাদ দিয়ে দেই আবার অনেকেই প্রোটিন জাতীয় খাবার খেয়ে ডায়েট করে থাকেন।সে ক্ষেত্রে আপনার উচিৎ একজন ডায়েটিশিয়ান এর পরামর্শ নেওয়া এবং প্রতিদিন যতটুকু পরিমান প্রোটিন প্রয়োজন তার চাহিদা মেটানো।