আজঃ বুধ, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাগান বিলাস এর সৌন্দর্য কথা

লিখেছেনঃ Nusrat পঠিত 2011 বার
বাগান বিলাস এর সৌন্দর্য কথা
বাগান বিলাস এর সৌন্দর্য কথা


বাগানবিলাস বা Bougainvillea আমাদের সকলের কাছেই কম-বেশি পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Bougainvillea spectabilis। এই বৃক্ষটির প্রায় ১৮টি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়।

বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনে বাগানবিলাস হতে পারে একটি উত্তম পছন্দ। বাগানবিলাস মূলত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে গুল্মজাতীয় বৃক্ষ হিসেবেই সুপরিচিত। এর রঙিন পাতাগুলো ফুলের চারপাশে বিদ্যমান থাকে। তিনটি পত্রমঞ্জরীর মাঝে ছোট ফুল হয়।

বোগেনভিলিয়া গ্ল্যাব্রা প্রজাতিতে উজ্জ্বল রঙের কাগজের মতো পাতাগুলো ফুলের চারপাশে ঘিরে থাকে। এই প্রজাতির গাছগুলো সাধারণত ২০-৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। কাগজের মতো দেখতে পাতা হয় বলে স্থানবিশেষে এটি কাগজফুল নামেও পরিচিত।

বাগানবিলাসের পাতাগুলো লাল, হলুদ, কমলা, গোলাপি বা মেজেন্ডা, কমলা ইত্যাদি রঙের হয়ে থাকে।

বোগেনভিলিয়া স্পেক্টাবিলিজ প্রজাতির বাগানবিলাসে খুব ছোট আকৃতির পাতা হয়।

বাগানবিলাস খুব দ্রুত বর্ধনশীল এবং পরিচর্যাও সহজ বলে বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বারান্দায়, ছাদে কিংবা বাড়ির গেইটে এটি রোপন করা যেতে পারে। এই বৃক্ষে সারাবছরই ফুল ফুটতে দেখা যায়।

বাগানবিলাস সম্পর্কে কিছু তথ্য

• বাগানবিলাস গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের বৃক্ষ বলে উষ্ণ আবহাওয়া এর পছন্দ তবে শীতে এর বৃদ্ধি মন্থর হয়ে যায়। এর বৃদ্ধির জন্য আদর্শ তাপমাত্রা 30 ডিগ্রি সেলসিয়াস ।

• সূর্যের তির্যক আলোয় বাগানবিলাসের পাতা হলদে হয়ে যায়। তাই সূর্যের তির্যক আলো এর পছন্দ নয়। এর উষ্ণ আবহাওয়া পছন্দ তাই দিনে ৬-৭ ঘন্টা সূর্যের আলো এর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন হয়।

• টবে লাগানের ক্ষেত্রে ভালো ড্রেনেজ সিস্টেম থাকতে হবে। এবং গাছের পুষ্টির জন্য গার্ডেন সয়েলের সাথে ডিমের খোসা গুড়ো, শুকনো পাতা গুড়ো বা ভার্মি কমপোস্ড ব্যবহার করা যেতে পারে।

• বাগানবিলাস কাদামাটি পছন্দ করে না। তাই ঘনঘন পানি দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে একদিন পরপর পানি দিতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় পানি না জমে। শিকড়ে পানি জমলে ছত্রাকের আক্রমণে গাছ মরে যেতে পারে।

• মার্চ/ এপ্রিল মাসে ফুল ফোটার পর এবং আগস্ত/সেপ্টেম্বর মাসে নাইট্রোজেনন ( অল্প পরিমানে), ফসফেট ( নাইট্রোজেন এর ডাবল পরিমান) এবং কমপোস্ট সার ব্যবহার করা যেতে পারে । সার দিলেই যে ফুল আসবে এমন কিন্তু নয়, উইনিভারসিটি অফ ফ্লোরিডার একদল গবেষক এর মতে ১৫ ঘ্নটা অন্ধাকার পেলে এর বেশি ফুল আসে।

• এক-দুই মাস পরপর গাছের ডাল ছাটাই করে দিলে ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এবং গাছ মোটা হয়।

• কীট-পতঙ্গমুক্ত গাছ হিসেবে বাগানবিলাসের সুপরিচিতি। কখনো কখনো ক্ষতিকর পোকামাকড়, শামুক এবং গাছের উকুন হিসেবে পরিচিত এফিড কীট দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। কিছু লেপিডোপটেরা বর্গের হাইপারকোম্প স্ক্রিবোনিয়া প্রজাতির লার্ভা খাদ্য যোগানদানকারী বৃক্ষ হিসেবে বাগানবিলাসকে ব্যবহার করে। বাগান বিলাসে ২ ধরনের প্রকার আক্রমন হয়, সুয় পোকা বা caterpillars এবং সবুজ মাছি বা green flies । পোকার আক্রমনে সাবান পানি ২/৩ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে জতদিন পোকা না চলে যায় এছাড়া নীমের রসও স্প্রে করা যেতে পারে।

• ডাল থেকে সহজেই এর নতুন চারা করা যায় রুট হরমোন, মধু বা দারচিনি গুড়ো ব্যবহার করে। এপ্রিল থেকে জুন মাসে গাছের কাষ্ঠল অংশ থেকে ডাল কেটে ( ৪/৬ ইঞ্চি) রুট হরমোন দিয়ে মাটিতে লাগিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ১.৫ থেকে ২ মাসে পর টবে লাগিয়ে দিতে হবে, কাটিং সব সময় গাছের গোঁড়ার দিকের ডাল থেকে নির্বাচন করতে হবে।

• ১-২ বছর পর পর গাছ রি পটিং করে দিলে গাছ ভাল থাকবে। সেক্ষেত্রে গাছের ৭৫% শিকড় রেখে বাকি ২৫% ছেটে দিতে হবে। অবশ্যই ছোট শিকড় কাটা যাবে না, মোটা এবং লম্বা সেইপ এর শিকড় কেটে দিতে হবে।

• বনসাইয়ের জন্য অনেক বাগানির প্রথম পছন্দ বাগানবিলাস। বনসাই তৈরি করতে গাছের কাষ্ঠল এবং মোটা ডাল নির্বাচন করে মাটিতে রোপন করতে হবে। চারা গাছটি ২-৩ বছর হয়ে গেলে এর রুট ট্রেনিং শুরু করতে হবে। এবং ৪-৫ বছর হয়ে গেলে স্টেইনলেইস ওয়্যারের মাধ্যমে বাগবানির পছন্দ অনুযায়ী সেইপ দেয়া যায়।

কম খরচে বাড়ি কিংবা অফিসের শোভা বৃদ্ধিতে বাগানবিলাসের তুলনা হয় না। এর রঙবেরঙের পাতা বাড়ির আঙিনায় প্রকৃতির স্পর্শ এনে দেয়। যা মনকে রাখে প্রফুল্ল। এর সাথে এটি দৃষ্টিনন্দনও বটে।