আজঃ বুধ, ০৮ মে ২০২৪

সিরাজের অতিথি সেবা।

লিখেছেনঃ মোঃ জাবেদ আলি পঠিত 195 বার


নোয়াইলতলা গ্রাম।গ্রামের দু,পাশে বিল।শীতের শুরুতে দুই বিলে আমন ধানের শিষ ফুলতে শুরু করে।বিলে তেমন পানি থাকে না তাই ছোট ছোট মাছ এসে জড়ো হয় খালে।গ্রামের হাঁসগুলি চড়ে বেড়ায় এখানে।ছোট মাছ আর শামুক খুঁজে খায়,কখনোবা নুয়ে পড়া ধানের শিষ।একটু উঁচু জায়গা পেলে দল বেঁধে ঠোট দিয়ে পালক চুলকায়।মধ্যে বিলে ভাঙা মাথার সিঁদুর গাছে বসে বকেদের অসর।

পড়ন্ত বিকেলে আর ছুটির দিনটা এগুলো দেখে দেখেই কাটে সিরাজের।শাপলা তুলে,মাছ ধরে আর ডিঙি নৌকা বেয়েই কেটে যায় অনেকটা সময়। 

সেদিন সাতসকালেই বিমলের চিৎকার-’আমার ফানগুলোন কিডা তুইলে আনলো।শীত আসলি কিছু পাহি ধরি,বেচি- খাই কিন্ত কিডা আমার পাছে লাগলো।’

মুহূর্তেই কিছু লোক এসে জড়ো হয়ে যায়,রাগলে যেন চোখ বের হয়ে আসে বিমলের।

প্রতিবার শীতে অসংখ্য অতিথি পাখি ধরা পড়ে এখানে।চেরো,ডাহুক,আলতিরাঙ্গা,কাড়া,নলঘুগা এই পাখি গুলি যেন অসংখ্য পরিবারের ভোজ হতেই এখানে আসে।ফাঁদ দিয়ে পাখি শিকারে দক্ষ বিমল বাবু।এবার সে দ্বিতীয় দিনের মতো ফাঁদ পেতছিল।কিন্তু বিলে তার পাতা ফাঁদ গুলি নেই,কারা যেন তার পাতা ফাঁদ তুলে নিয়েছে।

ঘাবড়ে গিয়েছিল রাজু, ও এ কাজ করতে চায়নি।সিরাজের কথাতেই এ কাজ করেছে রাজু।

কী হবে এখন?

আতিকুর মাস্টার এলাকার গন্যমান্য বাক্তি এবং সিরাজের চাচা আর এ জন্যই তার কাছে নালিশ দিয়েছে বিমল।

আতিকুর মাস্টার সিরাজ এবং রাজুকে উদ্দেশ্য করে জানতে চাইলেন-’তোমরা এ কাজ করেছ কেন?’

একটুও ভয় পেল না সিরাজ।সেদিন ক্লাশে স্যারের কাছে অতিথি পাখি সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনেছে আর সেগুলি বলতে শুরু করল সে-’সে অতিথি পাখি সেই সাইবেরিয়া থেকে আমাদের দেশে আসে।ধানের পোকামাকড় খেয়ে আমাদের ফসলের অনেক উপকার করে,ধান গাছে পরাগায়ন ঘটায়।শীত শেষে আবার ফিরে যায় নিজ দেশে।আমরা যদি এভাবে তাদের মেরে ফেলি তাহলে আমাদেরই ক্ষতি,বিপর্যয়ে পড়বে পরিবেশ।তা ছাড়া অতিথি পাখি শিকার করা নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

কিছুক্ষণ চুপ থাকলো আতিকুর মাস্টার ।

বিমলে দিকে তাকিয়ে বলল-’তোমাকে আর পাখি ধরতে দেখলে ফাঁড়ির পুলিশে খবর দেয়া হবে,এই দুই বিলে পাখি শিকার চলবে না।,

লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠলো বিমলের।

রাজুর হাত ধরে ছুটলো সিরাজ।দু’চোখে প্রত্যয় ভালো কিছু করার।