আজঃ শুক্র, ২৯ মার্চ ২০২৪

কম্পিউটার এসেম্বলিং ও কম্পোনেন্ট

লিখেছেনঃ Nusrat পঠিত 2795 বার
কম্পিউটার এসেম্বলিং ও কম্পোনেন্ট
কম্পিউটার এসেম্বলিং ও কম্পোনেন্ট


কম্পিউটার শব্দটি আমাদের খুব পরিচিত। ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত কম বেশি সবাই এটি ব্যবহার করে থাকে। তবে যারা নতুন ব্যবহারকারি তারা এটি তখনই সুষ্ঠভাবে ব্যবহার করতে পারবে যখন তারা কম্পিউটার এসেম্বলিং সঠিক ভাবে করতে পারবে। কম্পিউটার এসেম্বলিং আসলে কি?

কম্পিউটার এসেম্বলিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে কম্পিউটারে ব্যবহৃত সকল হার্ডওয়্যার ডিভাইস সুনির্দিষ্ট নিয়মে সংযোজন করা হয়।

অর্থাৎ কম্পিউটারে ব্যবহৃত সকল হার্ডওয়্যার ডিভাইসকে পারস্পরিক সংযোগ স্থাপন করে এটিকে কম্পিউটারে রূপদান করার প্রক্রিয়াকে কম্পিউটার এসেম্বলিং বলে।

প্রয়োজনীয় উপাদান

কম্পিউটার এসেম্বল করার জন্য যেসকল যন্ত্রাংশ প্রয়োজন সেগুলো হলঃ

  • কেসিং (পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট সহ)
  • মাদার বোর্ড
  • প্রসেসর
  • রেম
  • ভিজিএ বা এজিপি কার্ড
  • হার্ডডিস্ক
  • ডিভিডি বা সিডি রম ড্রাইভ
  • সাউন্ড কার্ড
  • পাওয়ার ক্যাবল
  • ডেটা ক্যাবল
  • বাহ্যিক কানেকশান
  • কনফিগারেশন ও সফটওয়্যার ইনস্টলেশন

এসেম্বলিং এর ধাপ

প্রথমেই কেসিংয়ের মধ্যে মাদার বোর্ড স্থাপন করতে হবে। লক্ষ্য রূখতে হবে যাতে মাদারবোর্ডের কোন অংশ কেসিংয়ের মেটালিক অংশের সাথে স্পর্শ না করে। বোর্ডটি স্থাপনের পর যথাযথভাবে স্ক্রু লাগিয়ে আটকিয়ে দিতে হবে। মাদারবোর্ডের পোর্ট সমূহ কেসিংয়ের পিছনের দিকে অবস্থান করবে। এই পোর্ট গুলো থেকে কীবোর্ড, প্রিন্টার, মাউস, স্ক্যানার ইত্যাদি সংযোগ দেয়া হয়।

এবার প্রসেসরটিকে মাদারবোর্ডে স্থাপন করতে হবে। প্রসেসর এর সাথে একটি হিট সিঙ্ক থাকে। হিট সিঙ্কটিকে প্রসেসর এর সাথে বসাতে হবে। প্রসেসরটি মাদারবোর্ডের সকেটের সাথে আটকিয়ে রাখার জন্য দুইটি ব্রাকেট থাকে। এই ব্রাকেট দুটিকে সকেটের উভয়পাশে বসাতে হবে। এবার প্রসেসরের কনট্যাক্ট অংশটি সকেটের মধ্যে স্থাপন করতে হবে। প্রসেসরের হিট সিঙ্ক, কুলিং ফ্যান থেকে পাওয়ার কানেক্টরটি মাদারবোর্ডের কানেক্টরের সাথে সংযোগ করতে হবে।

মাদারবোর্ডে RAM বসানোর স্টল থাকে। এই স্লট অনুযায়ী RAM কিনতে হবে। RAM এর স্লটের দুই প্রান্তের ক্লীপ পিছনের দিকে হেলিয়ে RAM এর কানেক্টর প্রাপ্ত স্লটের মধ্যে বসাতে হবে।

কেসিং এর কোন ইন্টারনাল বে এর মধ্যে হার্ডডিস্কটি স্থাপন করতে হবে। যেকোন ড্রাইভ স্থাপনের সময় একটু লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ড্রাইভের হোল ও কেসিং এর হোল একই বরাবর থাকে। ড্রাইভটি স্থাপন করা হয়ে গেলে উভয় পাশে স্ক্রু লাগিয়ে আটকাতে হবে।

এবার কোন এক্সটার্নাল বে এর মধ্যে ডিভিডি বা সিডিরম ড্রাইভটি স্থাপন করতে হবে। ডিভিডিরম ড্রাইভটি কেসিং এর সামনের দিক থেকে প্রবেশ করানোর পর এতে স্ক্রু লাগিয়ে আটকাতে হবে।

যন্ত্রাংশগুলো স্থাপন করা হয়ে গেলে কেসিংয়ের পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট থেকে মাদারবোর্ড, হার্ডডিস্ক, ডিভিডিরমে পিন অনুযায়ী সংযোগ দিতে হবে। এবার স্থাপনকৃত উপাদান বা যন্ত্রাংশে ডেটাক্যাবল সংযোগ দিতে হবে। এই ক্যাবলগুলো সাধারনত রিবন ক্যাবল হয়ে থাকে। এরপর কিছু সাহায্যকারী ক্যাবল সংযোগ দেয়ার মাধ্যমে এসেম্বলিং এর কাজ সম্পুর্ন হবে। সাহায্যকারী ক্যাবল গুলো হলো পাওয়ার লিড, হার্ডডিস্ক ইন্ডিকেটর, লিড রিসেট সুইচ ও পাওয়ার সুইচ ইত্যাদি ।

বিভিন্ন যন্ত্রাংশঃ

কম্পিউটার কেস

মাদারবোর্ডসহ অন্যান্য ডিস্ক ড্রাইভ, কুলিং ফ্যান বা শীতলকারী পাখা ও বিভিন্ন ধরনের অ্যাডাপ্টার যে বাক্সের মধ্যে স্থাপন করা হয় তাকে কম্পিউটার কেস বলে। এটি বিভিন্ন ডিজাইনের হতে পারে। সাধারণত এর ভিতরে পাওয়ার সাপ্লাই দেয়া থাকে।

পাওয়ার সাপ্লাই

কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যেমন মাদারবোর্ড, হার্ডডিস্ক, সিডিরমসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ কার্যক্ষম করার জন্য বিভিন্ন মাত্রার বিদ্যুৎশক্তির যোগান যে যন্ত্রাংশ হতে পাওয়া যায় তাকে পাওয়ার সাপ্লাই বলে। এটি বিদুৎ লাইনের AC বিদ্যুৎকে DC বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে। কম্পিউটারের জন্য ৫-১৫ ভোল্ট পর্যন্ত DC বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। এজন্য পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিটে বিভিন্ন মাত্রার বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের কানেক্টর থাকে। ডেস্কটপের জন্য বাজারে ২০০-৪৫০ ওয়াট পর্যন্ত পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট পাওয়া যায়।

মাদারবোর্ড

মাদারবোর্ড হলো কেন্দ্রীয় সার্কিট বোর্ড যার সাথে কম্পিউটারের অন্যান্য যন্ত্রাংশ যেমন পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট, প্রসেসর, মেমরী, ডিস্ক ড্রাইভ, ডিভিডি ড্রাইভ, এ্যাডাপ্টার কার্ড ইত্যাদি সংযোগ দেয়া হয়। কম্পিউটার সিস্টেমের সকল উপাদান পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে যে বৃহৎ সার্কিট বোর্ডের সাথে সংযুক্ত থাকে তাকে মাদারবোর্ড বা সিস্টেম বোর্ড বলে। এটি বাস বা তার (wifi) এর মাধ্যমে কম্পিউটারের প্রসেসরের সাথে অন্যান্য যন্ত্রাংশের সংযোগ রক্ষা করে থাকে।

মাইক্রো প্রসেসর

মাইক্রোপ্রসেসর হলো একক VLSI (very large integration) সিলিকন চিপ। মাইক্রোকম্পিউটারের সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা সিপিইউকে ভিএলএসআই প্রযুক্তির মাধ্যমে একীভূত করে এরি তৈরী করা হয়। এটি মাইক্রোকম্পিউটারেরে মস্তিষ্ক স্বরূপ।

ক্যাশ মেমরী

এটি একটি উচ্চগতি সম্পন্ন মেমোরী। CPU এর প্রসেসিংয়ের গতি প্রধান মেমোরীর গতি থেকে বেশি হওয়ায় ডেটা আদান প্রদানের ক্ষেত্রে স্পিড মিসমেচ হওয়ায় প্রসেসরের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। এ সমস্যা দূর করতে প্রসেসর ও প্রধান মেমরীর মাঝে উচ্চগতি সম্পন্ন যে মেমরী ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাকে ক্যাশ মেমরী বলে। প্রসেসিং এর জন্য যেসব নির্দেশ ও ডেটা বেশি প্রয়োজন হয় তা ক্যাশ মেমোরীতে রাখলে গড় অ্যাকসেস সময় কম হওয়ায় কম্পিউটার অতি দ্রুত কাজ করে।

হার্ডডিস্ক

হার্ড অর্থা শক্ত এবং ডিস্ক শব্দের অর্থ চাকতি। অর্থাৎ হার্ডডিস্ক বলতে বুঝায় শক্ত চাকতি বিশেষ। এটি কম্পিউটারের অক্সিলারি বা সেকেন্ডারী মেমোরী। আশির দশকে এই মেমোরীর প্রচলন শুরু হয়। বৃহত্তর ধারণ ক্ষমতার কারনে কম্পিউটারের সেকেন্ডারী স্টোরেজ হিসেবে এটি জনপ্রিয়। এর ধারণ ক্ষমতা গিগাবাইট থেকে টেরাবাইট পর্যন্ত হয়।

ভারচ্যুয়াল মেমোরী

এটি এক ধরনের মেমরী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম যা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে বাস্তবায়ন করা হয়।