আজঃ শনি, ২০ এপ্রিল ২০২৪

আদা স্বাস্থ্যের জন্য আশ্চর্যজনক উপকারী

লিখেছেনঃ জিসান আহমেদ পঠিত 809 বার
আদা স্বাস্থ্যের জন্য আশ্চর্যজনক উপকারী
আদা স্বাস্থ্যের জন্য আশ্চর্যজনক উপকারী


দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় একটি উপকরণ হচ্ছে আদা ।এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী আদা চিনে না কিংবা আদা খায়নি এমন মানুষ হয়তো পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে আদার ব্যবহার রয়েছে। বিশেষ করে রান্নার কাজে আদা বিশেষ মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই আদার বহু গুনাগুণ রয়েছে যা হয়তো অনেকেরই অজানা

চলুন জেনে নেয়া যাক আদা সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।

 

✓রোগ প্রতিরোধে আদা

 

আদা অনেক রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে থাকে যেমনঃ

  • শ্বাসকষ্ট সারাতে সাহায্য করে।
  • শ্বাস প্রশ্বাস পদ্ধতিতে উন্নতি ঘটায়।
  • বমি হওয়ার সম্ভাবনা দূর করে।
  • ক্যান্সার রোধ করে।
  • হজমে সাহায্য করে।
  • হার্ট ভাল রাখতে সাহায্য করে।
  • ঋতুস্রাবের ব্যাথা দূর করে।
  • মাথা ব্যাথা ও যন্ত্রণা দূর করে।
  • স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা কমায়।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
  • পুরোনো আমাশয় দূর করতে।
  • মাড়ির ফোলা ভাব দূর করতে

শুধু তাই নয়, আদা  ওষধি গুণাগুণ হৃদরোগ , রক্তের ব্যাধি, পাইলস ইত্যাদি রোগেও উপকারী।

 

✓আদার পরিচিতি

 

আদা একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।মাটির অভ্যন্তরে জন্মানো রাইজোমকে আর্দ্র অবস্থায় আদা বলা হয়, শুকনো আদা শুকনো অবস্থা বলে। প্রাচীন গ্রন্থে আদার উল্লেখ পাওয়া যায়। আদা বহু বছর ধরে ওষধি গুঁড়া, ডিকোশন, গুটিকা (ট্যাবলেট) এবং আওলেহ ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। আদা গাছ ১মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। এর পাতাগুলো সুন্দরভাবে সাজানো এবং সুবিন্যস্ত। পাতা ৩০-৩৫ সেন্টি মিটার লম্বাকৃতি এবং গাঢ় সবুজ বর্ণের । গাছের কন্দ বা মূল  

প্রাচীনকাল থেকে দৈনন্দিন রান্নার কাজে এবং বিভিন্ন ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে। আদার স্বাদ তীব্র ঝাল। আদাকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুকিয়ে নেওয়া হয়।

 

✓আদা ওষধি বৈশিষ্ট্য  

 

শুকনু আদার উত্তাপের কারণে এটি কৃপণকর, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, উত্তেজক, ব্যথা উপশমকারী, স্নায়ু উদ্দীপনা, স্যাটিটিং, উদ্দীপনা, গভীরতা, হজম, বায়ুচলাচল, শত্রু-লড়াই এবং আরশোগনা is উষ্ণ হওয়া, হৃৎপিণ্ড এবং রক্তনালীগুলিকে উদ্দীপিত করে। আদা তিক্ত এবং আলিফ্যাটিক হওয়ায় এটি স্ফীত ও শ্বাস-প্রশ্বাসের হয়। মিষ্টি ভিপাকা হওয়ার কারণে বৃষ্টি হচ্ছে। তীক্ষ্ণতার কারণে এটি বাধার উত্সও সরিয়ে দেয়।

 

✓ চুলের যত্নে আদার ব্যবহার

 

•  চুলকে মজবুত ও পুষ্টিকর করতে আদা ।

 

চুলের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি স্কাল্পের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে আদার কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটির ভেতরে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান চুলের গোড়ায় পুষ্টির ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি চুলকে এতটাই শক্তপোক্ত করে তোলে যে নানাবিধ উপকার পাওয়া যায়।  

 

•  হেয়ার ফলের মাত্রা কমাতে

 

মাত্রারিক্ত চুল পড়ছে নাকি? তাহলে চুলের পরিচর্যায় আজ থেকেই কাজে লাগাতে শুরু করুন আদাকে। দেখবেন হেয়ার ফলের মাত্রা তো কমবেই, সেই সঙ্গে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে চোখে পরার মতো। আসলে আদার ভেতরে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং আরও নানাবিধ উপকারি উপাদান হেয়ার ফলিকেলের ভেতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই চুল এতটাই শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে যে হেয়ার ফলের আশঙ্কা কমে।  

 

•   মাথার খুশকি দূর করতে

 

আদায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ, যা স্কাল্পে সংক্রমণের মাত্রা কমানের পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া আদ্রতাকেও ফিরিয়ে আনে। ফলে খুশকির সমস্যা কমতে সময় লাগে না।

 

• চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে

 

আদার ভেতরে উপস্থিত একাধিক উপকারি ফ্যাটি অ্যাসিড, যেমন লাইনোলিক অ্যাসিড, চুলকে যেমন শক্তপোক্ত করে, তেমনি পুষ্টির ঘাটতি দূর করার মধ্যে দিয়ে চুলকে উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত করে তুলতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে ১ চামচ আদার পেস্টের সঙ্গে হাফ কাপ শসা, ১ চামচ নারকেল তেল এবং ১ চামচ তুলসি তেল মিশিয়ে বানানো পেস্ট, সপ্তাহে ২-৩ বার চুলে লাগাতে হবে, তাহলেই কেল্লা ফতে!

 

চুলের গ্রোথ বাড়াতে

 

২ চামচ আদার পেস্টের সঙ্গে পরিমাণ মতো পেঁয়াজের পেস্ট মিশিয়ে নিয়ে তা যদি নিয়মিত চুলে লাগানো যায়, তাহলে স্কাল্পের ভেতরে সালফারের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে আরও নানা সব উপকারি উপাদানের ঘাটতিও দূর হয়। ফলে চুলর গ্রোথ দারুনভাবে হতে থাকে। তাই তো বলি, অল্প বয়সেই যদি মাথা ফাঁকা হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে এই ঘরোয়া টোটকাটিতে কাজে লাগাতে ভুলবেন না যেন!

 

✓ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে আদা  

 

হলুদ ত্বকের যত্নে দারুণ কাজ দেয়। ব্রণ ও দাগের ছোপ দূর করতেও কাজ করে এটি। এছাড়াও ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। হলুদ-আদা চায়ের মধ্যে জীবাণুনাশক উপাদান থাকায় এটি ত্বককে যে কোনও রকম সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়াও,ত্বক থেকে বয়সের ছাপ দূর করে এবং ত্বককে সজীব রাখে।

 

যেভাবে তৈরি করবেন হলুদ-আদা চা-

একটি পাত্রে এক কাপ পানি নিয়ে গরম করুন। পানি গরম হয়ে এলে তাতে এক চিমটে আদা বাটা এবং এক চিমটে হলুদ বা হলুদ বাটা দিন। পানি ফুটে এলে গ্যাস বন্ধ করে দিন। ঠাণ্ডা হতে দিন। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এলে। ছাকনি দিয়ে কাপে ছেঁকে নিন। তৈরি আপনার আদা-হলুদ চা। স্বাদ বাড়াতে এক চা চামচ মধু অথবা লেবুর রস বা এক চা চামচ গোলমরিচ মেশাতে পারেন।  

 

✓ওজন কমাতে আদা

 

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে মোক্ষম উপায় হতে পারে আদা। আদা ক্যালরি চটজলদি বার্ন করতে সক্ষম। তাছাড়া আদার রস কার্বোহাইড্রেট দ্রুত হজম করায়, মেটাবলিজম রেট বাড়ায়, ইনসুলিনের নিঃসরণ বাড়ায়। ফলে ওজন সহজেই নিয়ন্ত্রণে থাকে।

 

✓রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আদা

 

আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞদের মতে আদাতে এমন অনেক গুণ রয়েছে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে । সুতরাং, আয়ুর্বেদিক চিকিত্সকরা শীতের মৌসুমে রোগ (যেমন সর্দি ) রোধ এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন পরিবর্তনের জন্য সীমিত পরিমাণে আদা খাওয়ার পরামর্শ দেন । মনে রাখবেন যে কোনও রোগের ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে আদা সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত কারণ বেশি পরিমাণে সেবন করা আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে ।

 

✓ যে কোনও ধরনের যন্ত্রণা কমাতে আদা:  

একেবারেই ঠিক শুনেছেন ! বাস্তবিকই ব্যথা কমাতে আদার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটির অন্দরে উপস্থিত একাধিক ইনফ্লেমেটরি উপাদান, শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে শরীরের মধ্যে ইনফ্লেমেশন হ্রাস পায়। আর এমনটা হলে ব্যথার প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না।

 

 

✓আদা এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

 

প্রচুর পরিমাণে আদা সেবন করাও এই অসুবিধাগুলির কারণ হতে পারে: -

 

  • হৃদরোগ
  • কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি
  • গ্যাস্ট্রিক ব্যাধি
  • উচ্চ্ রক্তচাপ
  • গর্ভাবস্থায় আদা খাওয়া উচিত নয়।
  • বাচ্চাদের পিঠা দোশা এবং জ্বরজনিত পাথর রোগের ক্ষেত্রে আদা ব্যবহার করা উচিত নয়।

 

এখানে আদা এর উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য খুব সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে যাতে আপনি আদা এর ওষধি গুণাগুণগুলির পুরোপুরি সুবিধা নিতে পারেন তবে কোনও রোগের জন্য আদা ব্যবহার করতে পারেন বা আদা ব্যবহার করতে পারেন দয়া করে এটি করার আগে একটি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন ।